অসীমের খেলাঘর (Playroom of Infinity)

অসীমের খেলাঘর : কবিতা সংকলন 

aseemer khlaghor

Aseemer Khelaghar : Collection of Poems

ISBN : 978-81-920265-8-9

Publisher : Kaurab

Released Date : January 2011

Pages : 71

Price : Rs 50

প্রকাশকের মন্তব্য

প্রথম বই একটু দেরি করে এলো। কিন্তু এর ফলে পাওয়া গেল এক অত্যন্ত পরিণত কবিতা যেখানে রবীন্দ্রনাথ থেকে বিজ্ঞানে বিজনে পদার্থে অ-পদার্থে গানে গহিনে ক্রমাগত ফেরি করেছে কবিতা তার উঁচু পাল তুলে মনোজ্ঞ হাওয়ায়। শমিত রায়ের প্রচ্ছদ, দেখবার, পড়বার মতো বই।

অসীমের খেলাঘর সম্পর্কে বলছেন : নতুন কবিতার সম্পাদক কবি স্বপন রায়

“আহির ভৈরবে রাখা চোখ; অকপট ভোর….”

ভোর কপট হয় না বা ভোরে কপট লাগে না। রুণা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রথমকাব্যগ্রন্থ “অসীমের খেলাঘর” এই পঙ্‌ক্তিটি আমায় দিল। রুণা যে খেলার কথায় কবিতাকেও অংশ করে নিয়েছেন সেই খেলার নিয়ম কানুন কিছু আমরা জানি, কিছুটা জানিনা। কবিয়ত্রি খেলাটা শুরু করে দিয়ে হাসছেন। “অসীম” তো শব্দমাত্র নয়, সীমাহীনতা সেই একই ভ্রাতৃপ্রতিম হীনতার দিকে নিয়ে যায় যাকে বলে বিষয়হীনতা। এই একটি শব্দে আনন্দের যে অভিযানটি লুকিয়ে থাকে তাকে অসীম বলা যেতে পারে, এই মহাবিশ্ব যেরকম!

কবি রুণা সময়ের অনতিক্রম্যে পাঠককে নিয়ে যান, আমিও তাদের দলে। এক অসহায় কিন্তু আনন্দঘন পাঠক :

১। “অল্প হলেও গল্পগড়ানো চরকাবুড়ি পাখি নামাচ্ছে স্মৃতিজানলায়। গরাদের গায়ে পুরোনো জ্যোৎস্নার দাগ। দাগের ভেতর নিবিড় কিছু স্রোত…”   (হয়ত দাগ কিংবা জলের গল্প/পৃ:১১)

২। “গুণ ও নীয়কের চাপ চাপ ভূমিকায় সুবোধ; বালকের গোপাল থেকে সমে ফিরলেও ভাগশেষ নেই; মিনারেলে যেমন নিপাত্তা মীন…” (নীয়কের ভূমিকায়/পৃ:৬৪)

৩। “ওই যমুনা থেকে রাই; সমুদ্রস্নান। লবনাক্ত স্বাদেরা যমুনা পেরিয়ে ঢলঢল… রাই থেকে রাগিণী কিংবা বোসন; আপনি ভাবতে থাকুন। আমি ফ্লাশ করে আসি সুড়ঙ্গের শীতনিয়ন্ত্রিত কার্বনে…”                        (গড পার্টিকল/পৃ:৫০)

পড়তে পড়তে পরিধি বিস্তার পেতে থাকে। মহাবিশ্ব আর সময়ের জটিল আবর্তে দাঁড়িয়ে থাকে কবিতাটি। রুণার খেলাঘরে তার অবিমিশ্র অধিকার। বিন্যাস যখন অবিন্যস্ত তখনো ইউনিফিকেশানের এককে কবিতা জারিত হতে থাকে। তাতে বিজ্ঞান যতটা, নির্জ্ঞানও ততটাই :  

“কয়েকটি মলিকিউলার জুড়ে একটু সেলাইফোঁড়; একটি ওভেন। একটু অবুঝপন; খানিকটা দাবিদাওয়া; এর থেকে ওর হাতে গড়িয়ে পড়ুকনা…”                                                                                        (ইউনিফিকেশান/পৃ:৫০) 

সিঙ্গুলারিটির দিকে বিজ্ঞানী রুণা এগোতে গিয়ে নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছিলেন এ তো কবিদের জায়গা, এমন অবিন্যাসের একক লীয়মানতায় যে নৃত্যপর তরঙ্গের উল্টো এবং পাল্টা বিনির্মাণ হতে থাকে তার রঙ, স্বাদ, বৈচিত্র বিজ্ঞানীকে উস্কিত বোঝাপড়ার দিকে নিয়ে যায়, কবিকে নিয়ে যায় অসীমের খেলাঘরে। প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় এই কম্পার্টমেন্টগুলোয় তখন কবির আর কীসের প্রয়োজন? রুণা  লাইন যেখানে অনুভবের উড়ান বিশ্রামের রানওয়েতে নেমে আসে। “সেখানে প্রাণিত আকাশ। পাখিপ্রলাপবৃষ্টিতে শব্দকল্প। সুর, চিরনতুনের। ঘর বলতে একা বাসা। দোর বলতে মুড়োনো কৃষ্ণচূড়া। রং বাদ দিয়ে…রঞ্জনকে মনোরহিত করতে করতে…” এই তো কবিতা। এখানেই কবি রুণা : রুণারা :

১। “আনলাকি থার্টিন পেরিয়ে এলেই অভিমানী আকাশ আবার মুখ ফেরাবে। বরুণের তীক্ষ্ণ বাণে বেওজর বারিষ তখন মুখর হবে। আলাদিন তুমিও বরং তৈরি থেকো প্রদীপ নিয়ে। তামাদি চোখের ওপর আহ্লাদী বৃষ্টি, সবুজের ছয়লাপ…”                                                                                                                 (মাটি ভেজা ভেজা গন্ধ//পৃ:৪৭) 

২। “মানসীর অলকগুচ্ছে ঝুলে থাকা শূন্যতাগুলো জড়িয়ে নিই আঙুলে। তবু স্বাদকোরকের নির্দিষ্টতায় অধরা তোমার অস্তিত্ব। যতটুকু ছাপ রেখে গেছো, তার দীর্ঘকালীন চাপে ও তাপে নেমে গেছে গলনাঙ্ক। বহমান শোণিতের আনাচে কানাচে জমাট ইন্দ্রিয়গুলো নদী হতে হতে তোমাকেই খুঁজেছে বারবার…”                      (তোমার অসীমে//পৃ:৩১)

৩। “আকাশের দিকে চোখ তুলে দেখি পৃথিবীমুখী বীজেদের ছড়ানো ডানায় অজস্র প্রজাপতিমুখ,  হৃদয়ের কথা বলিতে ব্যাকুল…”                                                                                         (হৃদয়ের কথা বলিতে ব্যাকুল/পৃ:২৯)

৪। “আগুনপাখির নামেলা ঠোঁট; পদ্মপাতার জলছল। ছলাৎছলে মুখ রেখেছি;     হায় গো…” 

                                                                                                 (ব্যথায় কথা যায় ডুবে যায়, যায় গো/পৃ:৩৪)

এই ক্রমবিস্তারময় খেলাঘরটির মজাই এটা যে এর শেষ শেষপর্যন্ত হয়না। কবি রুণা কবিতা থেকে কবিতায় দেন জড়িয়ে দেন বিজ্ঞানের বর্ণচোরা আলো, চতুর্মাত্রিক বিহ্ববলতা, অন্তর্লীন তরঙ্গের কৃষ্ণগহ্বরে জায়মান আরেক সম্প্রসারিত আলো-অবশেষের আভা সমগ্র এবং আভাস সঙ্কলন। যেহেতু এও এক খেলার ভ্রমণ সেহেতু পাঠকের অসীমে বেজে ওঠে, “নেই-ঠিকানায় আলতো হাতে হারাসুরের আঙুলরেখা…” 

“অসীমের খেলাঘর” বিজ্ঞানের অবশেষে কবিতাকে পায়নি। ঘর’টি অসীম, সেখানে দুজনেই খেলছে। প্রামাণ্য বিজ্ঞান ও অপ্রমাণিত কবিতা। পাঠকের চোখে যা থাকে তাকেই আমরা জানি আনন্দ ব’লে। রোমাঞ্চ ব’লে। কবি রুণা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ধন্যবাদ এমন একটি অসাধারণ খেলায় প্রবেশের অনুমতি দেবার জন্য।

                                                                   …..সম্পূর্ণ পাঠ নতুন কবিতা, নবম বর্ষ, প্রথম সংখ্যা-2012

অসীমের খেলাঘর সম্পর্কে বলছেন : কৌরবের সম্পাদক কবি আর্যনীল মুখোপাধ্যায়

মিতভাষী এই প্রথম বইতে রুণা বন্দ্যোপাধ্যায় যোজনান্তরে চলে গেছেন তাঁর সাবলীল গহিনভাষণের সব জটিলতার মাস্তুল তুলে দিয়ে মনোজ্ঞ হাওয়ায়। রবীন্দ্র পংক্তিভাবনা থেকে কত সহজে চলে গেছেন পদার্থে অ-পদার্থে বিজ্ঞানে বিজনে। ফোর্থ ডায়মেনশানের আড়ালে কে? তার অনুসন্ধান করে এই কবিতা। জিনোমরহস্যে নিজেকে টুকরো করে। আবার জোড়াও লাগায়। এইসব খেলা নিয়েই অসীমের খেলাঘর। অবশ্য রুণা হয়ত তাঁর স্বভাবজ বিনীতবচনে বলবেন ‘বিবর্ণ যাপনের ইস্তেহার খুঁড়ে গড়েছি এই বর্ণান্ধ কিংখাব’ – এই লাইনটা ভুল, এ কিংখাব বর্ণময়।

 

Back To Home