অন্তর্বর্তী পঙ্‌ক্তি (Between the Lines)

antarbartee-cover

অন্তর্বর্তী পঙ্‌ক্তি সম্পর্কে বলছেন – কবি বারীন  ঘোষাল

আলোর অরুণ ও-রুণা কী নিপুণভাবে প্রকাশিত করেছে পাঠবস্তুগুলি – কবিতাকে অণুকবিতায়, গদ্যকে স্বমহিমায় ফুটিয়ে তুলতে গিয়ে তীব্র আসক্তি নিয়েও কেমনভাবে নিরপেক্ষ থাকতে হয় জানিয়েছে, সমস্ত প্যারাডাইম শিফট ও সমস্ত নবীন জ্যঁরকে কলমে রেখে রচনাগুলির সিনেমা, চিত্রকলা, ভাস্কর্য ও সঙ্গীতকে জটিলতামুক্ত করে তুলেছে – আশ্চর্য হতে হয়!! এই বই পড়ার পর মূল বইগুলো ফিরে পড়তে ইচ্ছে করবে, বলে রাখলাম। রুণা বন্দ্যোপাধ্যায়ও তো একজন পাঠিকা। আর আমরা!! 

অন্তর্বর্তী পঙ্‌ক্তি সম্পর্কে বলছেন – ভিন্নমুখ পত্রিকার সহসম্পাদক কবি ইন্দ্রনীল বিশ্বাস

রুণা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই গদ্য সংকলন পড়তে পড়তে দ্বিতীয় পাঠক হিসেবে যে বিন্দুগুলো বলবার তা হল:

১। রুণার প্রতিটি লেখা শেষ পর্যন্ত তাড়না দিয়ে পড়িয়ে নিয়েছে। সহমত হয়েছি। সহমত হইনি। তবু ছাড়া যায়নি।
২। অবশ্যই রুণার ভাষা। কাব্যিক মাধ্যম আশ্রিত গদ্য এবং গাদ্যিক মাধ্যম আশ্রিত গদ্য – কোথাও কোনো আপোষ করেনি।
৩। তাঁর যুক্তিপ্রবাহের কাছে মাথা নোয়াতে হয়। তবে ব্লার্বে বলা “তীব্র আসক্তি নিয়েও কেমন ভাবে নিরপেক্ষ থাকতে হয় জানিয়েছে” – এর সঙ্গে আমি অন্তত সহমত নই। আসক্তি এবং নিরপেক্ষ এই ধারণা পুনর্বিবেচনার দাবী করে – অবস্থানগত এবং ভাবনাগত।
৪। গদ্যের ভেতর নানা প্রসঙ্গে যে বিষয়গুলো এসেছে তাই তাঁর নিজস্ব গদ্যরীতির নিদর্শন হয়ে থাকল।

“তারপর সব হারানো খেলা। ভাষা শব্দ বাক্য। মাথার ভেতর শুধু কিছু ধ্বনি ধা ধরেছে। স্বরলিপিহারা। …… বুটিকে বসানো জীবন্ত ভাষা তখন রোদাবিল ট্রেকিংএ……”

মধ্যবর্তী অংশটুকু তৃতীয় পাঠকের জন্য থাক। কেননা কবি স্বপন রায়ের গদ্য সংকলন ‘একশো সূর্যে’ –র প্রথম পাঠক রুণা তাঁর পাঠপ্রতিক্রিয়ায় রেখে গিয়েছেন এমন অনেক অনুভব যা দ্বিতীয় পাঠক হিসেবে আমার কাছে আবিষ্কারই। আসলে তিনি কবির ভাবনার লিপিবদ্ধ অন্তর্বর্তী লিপিগুলিকে পুনরুদ্ধার করেছেন। কবিতা ভাবনা – যাকে বারীন বলেন কবিতা লিপি – তার মধ্যবর্তী ফাঁকা অংশগুলো যে অযুত সম্ভাবনা নিয়ে থাকে তাকে দ্বিতীয় পাঠকের হাতে তুলে দিয়েছেন। ফলে আমরা যেমন ‘একশো সূর্যে’ –র স্বপনকে পুনরাবিষ্কার করতে পারছি, সেই সঙ্গে স্বপনীয় গদ্যের অন্তর-পাঠও পাচ্ছি। এতে আবিষ্কারের আনন্দ হওয়াটা অ-স্বাভাবিক নয়।

আর্যনীল মুখোপাধ্যায় এবং প্যাট ক্লিফর্ড-এর যৌথ কাব্যগ্রন্থ চতুরাঙ্গিক/স্কোয়েয়ার্স এর প্রস্তাবনা বলছে “যৌথতা এক নিরালম্ব নীলাঞ্জন…আমি থেকে আউলে ওঠা আমরা হাত বাড়িয়ে দিই পাখিটার নরম শরীরে। একটু মাটি একটু ভালোবাসা দিয়ে গড়ে উঠতে থাকে তার চোখ। পাখিডাকা গান গোপনে গোপনে। চোখেদিই নীল কাজলের ভাষা; আমাদের যৌথতা। দুহাতে জড়িয়ে যায় আঙুলের নৈঃশব্দ্য। মৃতবৎসা যোনির সবুজ ফরাশে জেগে ওঠে যৌথকবিতার মুখ”। এই উদ্ধৃতি তুলে আনবার কারণ পরের পাতায় জেগে থাকা শীর্ষক “কীভাবে শত্রুতাকে প্রতিবন্ধী করেছি আমরা”, যা আর্যনীলেরই পঙ্‌ক্তি। এ প্রসঙ্গে বিস্তারে যাওয়ার আগে বলে নিতে হবে যে এই যৌথ কাব্যগ্রন্থের অন্যতম কবি প্যাট ক্লিফর্ডকে বাংলাভাষি পাঠকের কাছে পরিচয় করিয়েছেন যিনি তিনিই এই যৌথতার অন্য মুখ আর্যনীল। ফলে দুটি ভিন্ন ধারা, ভিন্ন প্রেক্ষাপট যখন একইরকম প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন একই রকম প্রতিফলিত অন্ধকারে তখন এই শীর্ষক পাঠভিন্নতায় নিয়ে যাওয়ার পথ করে দেয়। কাব্যগ্রন্থের শীর্ষককে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে প্যাট ক্লিফর্ড যা বলেছেন তা রুণার দেওয়া উদ্ধৃতি উদ্ধার করেই দেখে নেওয়া যাক – a linguistically reflected text was produced- a poem that can be read in four waysThese multiple reading possibilities attribute a four-sided quality to the poem as implied by the title words “chaturangik”

তাহলে কেমন হবে এই যৌথ পাঠের চতুরাঙ্গিক পথ?

১।শব্দের অস্থির খোলে যেটুকু অর্থের মাখামাখি সেখান থেকে মুক্তি দেবেন ওই খোলা আকাশে।
২। নিয়মের পাটভাঙা চিহ্নসমূহ মনের কোনো গহনে লুকিয়ে থাকে। নিভৃতে তৈরি করে এক আপোষহীন প্রতিরোধ, যে মানতে চায় না বিজ্ঞানকেও।
৩। সাবজেক্ট থেকে অবজেক্টের এই কেন্দ্রাভিগ চলনে নাস্তি এই কবিদের। বরং অবজেক্ট থেকে সাবজেক্টের দিকে কেন্দ্রাতিগ চলন তাঁদের।
৪। পাঠক, আপনার ভাসামেঘ চোখের ওই রোদ্দুরে নেশায় ভর করে আমরা পৌঁছে গেলাম চতুরাঙ্গিকের শেষ অঙ্গে। ‘রাজা’। যে রাজার সঙ্গে পাশাখেলা। যে রাজত্বের মাঝবরাবর পাতা ছিল ছক্কা-পাঞ্জার এক নিবিড় দীর্ঘসূত্রতা।

-এখানে মনোযোগ সহকারে খেয়াল করার যে একটি কাব্যগ্রন্থ পাঠের পাশাপাশি গড়ে উঠছে আরো একটি সমান্তরালের পাঠ, যে পাঠটি প্রতিবিম্বিত নয় বরং প্রতিসারিত।

……সম্পূর্ণ পাঠ ভিন্নমুখ, ১৩ বর্ষ, ৭২ সংখ্যা, বৈশাখ ১৪১৯

Amazon এ অন্তর্বর্তী পঙ্‌ক্তি

বইছই তে অন্তর্বর্তী পঙ্‌ক্তি

Back To Home